কি আছে ভূটানের এই ছবিতে?

কি আছে ভূটানের এই ছবিতে?

অনলাইন ডেস্ক :

২০০০ সাল পরবর্তী সারা বিশ্বে ইন্টারনেট–সুবিধা ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ২০০৬ সালের দিকেও ভুটানের মানুষের কাছে এটা ছিল অজানা অধ্যায়। কারণ, দেশটি তখনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধার আওতায় ছিল না। অনেক স্থানে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখারও কোনো উপায় ছিল না। তখন দেশটির রাজতন্ত্রে পরিবর্তন আসে। শান্তিপ্রিয় দেশটির নাগরিকেরা প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার পান। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা দর্শকের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন ভুটানের পরিচালক পয়ো চোয়িং দরজি। সিনেমার নাম ‘দ্য মঙ্ক অ্যান্ড দ্য গান’।

ভুটান থেকে তৃতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শাখায় একাডেমি পুরস্কার অস্কারে পাঠাচ্ছে ‘দ্য মঙ্ক অ্যান্ড দ্য গান’। সিনেমায় উঠে এসেছে ভুটানের ২০০৬ সালের বেশ কিছু ঘটনা। সেই সময় ভুটানে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায়। সবে গণতন্ত্রে রূপ নেওয়া দেশটির বিভিন্ন এলাকায় কীভাবে মানুষ ভোট দেবেন, সেগুলো জানানোর উদ্যোগ নেয় দেশটির সরকার। ভোটারদের নিবন্ধন ও কীভাবে ভোট দিতে হয়, সেগুলো শেখানোর জন্য ভুটানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা যান। কিন্তু পাহাড়ঘেরা গ্রামের অনেক অঞ্চলের মানুষের ভোটদানে কোনো আগ্রহ নেই। তারা ভোট দিতে চান না। অনেকেই তাদের জন্মদিন জানেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনেক বুঝিয়ে মাত্র ১০ ভাগ মানুষ ভোটার হিসেবে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দূরবর্তী এলাকার মানুষ তখনো জানতেন না, দেশের রাজতন্ত্র নেই। জানার পরে তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের তেমন প্রয়োজন নেই। এমনিতেই তারা সুখে আছেন। এর মধ্যে একজন সন্ন্যাসী ও তার গানকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে সিনেমাটি। ভুটানের ঐতিহ্যকে ধারণ করে এই গান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন এসেছেন বিশেষ পুরোনো রাইফেলের খোঁজে। এই নিয়ে সামাজিক ঘরানার সিনেমায় টানটান উত্তেজনা আর রহস্যে এগিয়ে চলে পাহাড়ি মানুষের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির গল্প।

পয়ো চোয়িং দরজির প্রথম সিনেমা ‘লুনানা: আ ইয়াক ইন দ্য ক্লাসরুম’। সিনেমাটি গত বছর দ্বিতীয়বারের মতো অস্কারে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শাখায় জমা দেওয়া হয়। সেই বছরই সিনেমাটি ভুটানে ইতিহাস গড়ে প্রথম মনোনয়ন পায়। বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পায় বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী স্কুলের গল্প। সিনেমাটির সফলতার পরে এই পরিচালক ‘দ্য মঙ্ক অ্যান্ড দ্য গান’ সিনেমার কাজ শুরু করেন। পরিচালক সিনেমাটি নিয়ে বলেন, ‘সিনেমার প্রতিটি চরিত্র ভুটানের ওই সময়ের সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমি যেখানে বেড়ে উঠেছি, সেখানে কোনো টেলিভিশন ছিল না। ওই এলাকা সবকিছু থেকেই বলা যায় বিচ্ছিন্ন ছিল। আমার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন আমি কোকা–কোলা খেয়েছি। সেই সময় তিব্বত–সিকিমের নানা ঘটনার সাক্ষী। এই ঘটনাগুলোই পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে।’

ভুটানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে সিনেমাটি দেখতে পারেন। এ ছাড়া গল্প ও উপস্থাপনা দর্শককে আটকে রাখবে। এর মধ্য দিয়ে ভুটানকে নিয়ে দেশটির সাধারণ মানুষের মনোভাব জানা যায়। নতুন করে আবিষ্কার করা যায় ভুটানের প্রকৃতিকে। ভ্যারাইটি সিনেমাটির গতি ও অভিনয়শিল্পীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। কারণ, সাধারণ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে থেকে অভিনয় বের করে আনায় শতভাগ সফল পরিচালক।
পরিচালক তাঁর আগের সিনেমায় বেশির ভাগ নতুন অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে শুটিং করেছেন। এবারও সেই পথেই হেঁটেছেন। শুটিংয়ের লোকেশন দেখতে গিয়ে সেখানকার একজনকে পছন্দ করেন পরিচালক। এমন অভিনয়শিল্পী সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সবার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। সিনেমাটি এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের টেলুরয়েড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়। পরে টরন্টো ও বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে। পয়ো চোয়িং দরজি এর আগে চমক দেখিয়েছিলেন, ‘লুনানা: আ ইয়াক ইন দ্য ক্লাসরুম’ সিনেমা নির্মাণ করে। সেখানেও তিনি প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার গল্প তুলে ধরেন। গল্পটা এমন, দাদির সঙ্গে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে থাকেন তরুণ ইউগুয়েন। তার ইচ্ছা গান করা। তিনি পরিকল্পনা করছেন শিগগির অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তাকে যেতে হয় ভুটানের প্রত্যন্ত অঞ্চল লুনানায়। একটি বিদ্যালয়ে পড়ানোর দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে। হিমালয়ের পাশে পাহাড়–পর্বত পেরিয়ে সেই বিদ্যালয়ে হেঁটে যেতে লাগে প্রায় তিন দিন।

সেখানে বসবাস করে হাতে গোনা মানুষ। সেখানকার একমাত্র স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বাইরে কঠিন এক সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। শুধু এই সিনেমাই নয়। দর্জি তাঁর ক্যারিয়ারের পরবর্তী সিনেমা নির্মাণ শুরু করেছেন। সিনেমার নাম ‘টেলস অব তাইপেই’ ও ‘ডেথ অব বিষু’। দেশের বাইরে ভারতের সঙ্গে ‘ডেথ অব বিষু হবে’ পয়ো চোয়িং দরজির প্রথম সিনেমা।
তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি, ইন্ডিওয়ার, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আইএমডিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *