জেগে উঠছে জেলা শহরের মঞ্চ

জেগে উঠছে জেলা শহরের মঞ্চ

অনলাইন ডেস্ক :

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ দুই বছর অনেকটা স্থবির ছিল দেশের নাট্যাঙ্গন। নাট্যদলগুলো অনলাইনে বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করলেও বিগত তিন মাস ধরে ফের মঞ্চে সরব হয়েছে। কর্মশালা, নাটক মঞ্চায়ন এবং উৎসব আয়োজনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নাটক পাড়া। বিভিন্ন জেলায় আয়োজিত হচ্ছে নাট্য উৎসব। মঞ্চে আসছে নতুন নাটক। হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় নতুন নাটক মঞ্চে এনেছে স্থানীয় নাট্যদলগুলো। হবিগঞ্জের জীবন সংকেত এনেছে করোনাকালের কাহিনী নিয়ে নাটক ‘অবিনাশী কাল’, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য একাডেমি এনেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার সত্য ঘটনা নিয়ে ‘রক্তাক্ত ৭১’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুশীলন নাট্যদল এনেছে ‘নায়ক ও খলনায়ক’, ফেনী থিয়েটার এনেছে ‘পেজগী’।

গত ২৮ ও ২৯ মার্চ হবিগঞ্জের নাট্যদল জীবন সংকেত এর স্টুডিওতে মঞ্চায়িত হয় নাট্যদলটির নতুন প্রযোজনা ‘অবিনাশী কাল’। নির্দেশনা দিয়েছেন অনিরুদ্ধ কুমার ধর। করোনার লকডাউনের দিনগুলোতে নাটকটি লিখেছেন রুমা মোদক। অনলাইনে নাটকটি প্রথম প্রদর্শনী হয়। নাট্যকার রুমা মোদক বলেন, ‘সেই দুর্বিষহ সময়। তখন সবাই গৃহবন্দি হয়ে আছি। থিয়েটার করা যাচ্ছে না। মূলত তখনই পরিকল্পনাটা হয় যে আমরা অনলাইনে একটা নাটক করব। অবিনাশী কাল প্রথমে অনলাইনে শো করি। এখন করোনার প্রকোপ কমেছে তাই মিলনায়তনে মঞ্চায়নের পরিকল্পনা করা হয়।’

‘অবিনাশী কাল’ নাটকের মাধ্যমে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন নাট্য দম্পতি অনিরুদ্ধ কুমার ধর ও রুমা মোদকের কন্যা অদ্বিতীয়া ধর পদ্ম। করোনাকালীন নিনিয়া নামের একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে সে, যে কিনা সৎ মেয়ে হয়েও করোনাকালে বাবার পাশে দাঁড়ায়। প্রথম নাটকে অভিনয় করেই প্রশংসিত হয়েছেন পদ্ম। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বাবা-মা নাটক নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আমিও বেড়ে উঠেছি নাটকের মহড়াকক্ষে। এর আগে ‘জ্যোতিসংহিতা’ নাটকের কোরাস দলে অংশ নিয়েছি। কিন্তু অবিনাশী কাল নাটকটিই মূলত আমার প্রথম নাটক, যেখানে বড় কোনো চরিত্রে অভিনয় করেছি। নাটকের মঞ্চায়নের পর এত মানুষের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, ভীষণ ভালো লেগেছে। নাটকটি দেখে অনেকে কেঁদেছেন, সেটা দেখে মনে হয়েছে আমি বোধহয় ভালোই করেছি।’ অবিনাশী কাল নাটকে আরও অভিনয় করেছেন অনিরুদ্ধ কুমার ধর, জুয়েল দাস, বর্ষা রায়, তন্বি পাল, ঊর্মি বড়ুয়া, তুষ্টি রায়, শক্তি রানী দাস দৃষ্টি, তানজিয়া আহমেদ, শাহ মো. রাসেল।

গত ২২ মার্চ ‘রক্তাক্ত ৭১’ মঞ্চে আনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য একাডেমি। পরে ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবসেও নাটকটির আরেকটি প্রদর্শনী হয় স্থানীয় আবদুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চে। এই নাটকের মাধ্যমে অনেক দিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাট্যাঙ্গন ফের সরব হয়ে উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় চলা গণহত্যার ওপর গবেষণা করে ‘রক্তাক্ত ৭১’ নাটকটি লিখেছেন কবি ও গবেষক জয়দুল হোসেন। নির্দেশনা দিয়েছেন আল আমীন শাহীন এবং শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন পাভেল রহমান। অভিনয় করেন জামিনুর রহমান, নাঈম রহমান, নুসরাত জাহান বুশরা, সাথী ইসলাম, রিপন দেবনাথ, সৈকত হোসেন জয়, নূর মাহদী এহতেশাম, সানজিদা আক্তার, সাব্বির আহমেদ, মেহেদী হাসান বিনয়, রাইসুল ইসলাম সাব্বির ও সাঈদ সরকার। সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, ‘সাহিত্য একাডেমি ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত নাটকের চর্চায় যুক্ত। মাঝে কিছুদিন ঝিমিয়ে থাকার পর আবার সরব হয়েছে সাহিত্য একাডেমি। শিগগিরই নতুন আরেকটি নাটক মঞ্চে আনার পরিকল্পনাও চলছে।’

গত ৫ মার্চ রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে রাজশাহী থিয়েটার আয়োজিত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় নাট্যোৎসবে প্রথম মঞ্চস্থ হয় অনুশীলন নাট্যদলের নতুন নাটক ‘নায়ক ও খলনায়ক’। এটি অনুশীলন নাট্যদলের ৬৪তম প্রযোজনা। রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। অন্যদিকে গত ২৮ মার্চ ফেনীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়িত হয়েছে ফেনী থিয়েটার এর নতুন নাটক ‘পেজগী’। এটি নাট্যদলের ৩৬তম প্রযোজনা। মলিয়েরের রচনা থেকে রূপান্তর করেছেন অপু আনাম এবং নির্দেশনা দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন রাজু।

এছাড়া কুমিল্লায় যাত্রিক নাট্যগোষ্ঠী গত ২৯ ও ৩০ মার্চ আয়োজন করেছে নাট্য উৎসব। মঞ্চায়ন হয় ‘শাস্তি’ এবং ‘আমি রাজা হব’ নামে দুটি নাটক। এছাড়া টাঙ্গাইল, রংপুর, মৌলভীবাজার, রাজশাহীতে নাট্যোৎসব আয়োজিত হয়েছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহযোগিতায় শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে বিভাগীয় নাট্য বিষয়ক কর্মশালা।

সূত্র : দেশরুপান্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *