বাংলা চলচ্চিত্রের কিং খান শাকিব খান

বাংলা চলচ্চিত্রের কিং খান শাকিব খান

বিনোদন মেইল ডেক্স:

শাকিব খান

শাকিব খান বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নায়ক। তিনি অসংখ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। নায়ক মান্না প্রয়াত হওয়ার পর শাকিব খান বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে একক আধিপত্য নায়ক হিসেবে আবির্ভাব হন। তিনি তখন একের পর এক ধামাকা ছবি উপহার দেওয়া শুরু করেন। শাকিব খান শুধু একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতাই নন, তিনি একাধারে একজন প্রযোজক, চলচ্চিত্র সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

শাকিব খান চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন বাংলাদেশের গুণী নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত অনন্ত ভালবাসা (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে শাকিব খান চলচ্চিত্রে আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজা’র। তিনিই প্রথম শাকিব খানের খোঁজ দেন চিত্রপরিচালক সোহানুর রহমান সোহান’কে।

নৃত্য পরিচালক আজিজ শাকিব খানের কিছু স্টিল ছবি দেন সোহানুর সোহান’কে এবং খুব করে অনুরোধ করেন শাকিব খান তার চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে নেওয়ার জন্য। নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজার জোরাজুরিতেই শাকিব খানকে সিনেমায় নেন সোহানুর রহমান সোহান। তবে সোহানুর রহমান সোহানের মত আসলেই শাকিব খান নায়ক হিসেবে যোগ্য ছিলেন বলেই তাকে তার চলচ্চিত্রে নিয়েছেন।”

 

শাকিব খান তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দেশের গণমাধ্যমে “সুপারস্টার”, “কিং খান” ও “ঢালিউড কিং” হিসাব এখন বেশ সমাদৃত। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত বাংলাদেশের চিত্রনায়ক।

 

শাকিব খান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন, যার মধ্যে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ৪টি, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ৮টি, বাচসাস পুরস্কার ৩টি ও সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কার ৪টি। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে যে ৪টি ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, সেগুলো হল- ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না (২০১০), খোদার পরে মা (২০১২), আরো ভালোবাসবো তোমায় (২০১৫) এবং সত্ত্বা (২০১৭)।

 

শাকিব খান ১৯৯৯ সালে ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ ছবিতে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হলেও তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত অনন্ত ভালবাসা, যা ঐ সালেই মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিটি খুব একটা সফল না হলেও নায়ক হিসেবে শাকিব খান সবার নজর কাড়েন।

তারপর ২০০০ সালে ‘গোলাম’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। একই বছর তিনি ‘আজকের দাপট’ ছনিতে পূর্ণিমার সঙ্গে অভিনয় করেন। এছাড়া ‘দুজন দুজনার’ ছবি তিনি পপির সঙ্গে অভিনয় করেন এবং বিষে ভরা নাগিন ছবিতে মুনমুনের সঙ্গে অভিনয় করেন।

 

২০০১ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- শিকারী, স্বপ্নের বাসর, মায়ের জেহাদ, রাঙ্গা মাস্তান, হিংসার পতন এবং বন্ধু যখন শত্রু।

 

তারপর ২০০২ সালে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হল- ফুল নেব না অশ্রু নেব, স্ত্রীর মর্যাদা, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, নাচনেওয়ালী এবং বিশ্ব বাটপার।

 

২০০৩ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- সাহসী মানুষ চাই, প্রাণের মানুষ, ক্ষমতার দাপট, ও সবার উপরে প্রেম চলচ্চিত্রে।

 

২০০৪ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- নয়ন ভরা জল, আজকের সমাজ, বস্তির রানী সুরিয়া, রুখে দাড়াও উল্লেখযোগ্য।

 

২০০৫ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- সিটি টেরর ও বাধা।

 

২০০৬ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- সুভা, কোটি টাকার কাবিন, পিতার আসন, দাদীমা, চাচ্চু, ঢাকার পোলা বরিশাইল্যা মাইয়া এবং মায়ের মর্যাদা।

 

২০০৭ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- আমার প্রাণের স্বামী, কাবিননামা, যমজ, স্বামীর সংসার, ডাক্তার বাড়ি, তুই যদি আমার হইতি রে, কথা দাও সাথী হবে, দানব সন্তান, কপাল, মা আমার স্বর্গ, কঠিন প্রেম ও এক বুক জ্বালা।

 

২০০৮ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- তোমাকে বউ বানাবো, আমার জান আমার প্রাণ, সমাধি, ১ টাকার বউ, ভালোবাসার দুশমন, প্রিয়া আমার প্রিয়া, টিপ টিপ বৃষ্টি, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, আমাদের ছোট সাহেব, সন্তান আমার অহংকার, যদি বউ সাজো গো ও মনে প্রাণে আছ তুমি।

 

২০০৯ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- আমার প্রাণের প্রিয়া, স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা, ভালোবাসা দিবি কিনা বল, মন যেখানে হৃদয় সেখানে, বলোনা কবুল, বিয়ের প্রস্তাব, জন্ম তোমার জন্য, প্রেম কয়েদী, সাহেব নামের গোলাম, ও সাথী রে ও সবার উপরে তুমি এবং আমার ভাই আমার বোন (ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায়)।

 

২০১০ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- বলো না তুমি আমার, প্রেম মানে না বাধা, টপ হিরো, পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, টাকার চেয়ে প্রেম বড়, জীবন মরণের সাথী, প্রেমে পড়েছি, চেহারা: ভন্ড-২, প্রেমিক পুরুষ, হায় প্রেম হায় ভালোবাসা, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, চাচ্চু আমার চাচ্চু ও নিঃশ্বাস আমার তুমি।

 

২০১১ সালে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- কোটি টাকার প্রেম, টাইগার নাম্বার ওয়ান, মনের জ্বালা, কিং খান, আদরের জামাই, বস নাম্বার ওয়ান, মাটির ঠিকানা এবং কে আপন কে পর।

 

২০১২ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- সে আমার মন কেড়েছে, বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না, এক টাকার দেনমোহর, মাই নেম ইজ সুলতান, ডন নাম্বার ওয়ান, খোদার পরে মা, ঢাকার কিং।

 

২০১৩ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- ঢাকা টু বোম্বে, ফুল এন্ড ফাইনাল, জোর করে ভালোবাসা হয় না, ভালোবাসা আজকাল, নিষ্পাপ মুন্না, জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার, দেবদাস, মাই নেম ইজ খান, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী।

 

২০১৪ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- হিরো: দ্যা সুপারস্টার, হিটম্যান, রাজত্ব, ফাঁদ – দ্য ট্র‍্যাপ, সেরা নায়ক, ডেয়ারিং লাভার, কঠিন প্রতিশোধ, এক কাপ চা ও দবির সাহেবের সংসার।

 

২০১৫ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- এইতো প্রেম, আরো ভালোবাসবো তোমায়, দুই পৃথিবী, লাভ ম্যারেজ ও রাজাবাবু – দ্য পাওয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

 

২০১৬ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- রাজা ৪২০, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২, শিকারি, রানা পাগলা – দ্য মেন্টাল ও সম্রাট।

 

২০১৭ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- সত্তা, নবাব, রাজনীতি, রংবাজ ও অহংকার।

 

২০১৮ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- আমি নেতা হবো, চালবাজ, পাংকু জামাই, চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া, সুপার হিরো, ভাইজান এলো রে, ক্যাপ্টেন খান।

 

২০১৯ সালে যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- পাসওয়ার্ড, নোলক ও মনের মতো মানুষ পাইলাম না।

 

২০২০ সালে শাকিব খানের যে ছবিগুলো মুক্তি পায় সেগুলো হল- বীর ও শাহেনশাহ।

 

শাকিব খান অভিনীত যে ছবিগুলো প্রশংসিত হয়-

এফ আই মানিক পরিচালিত স্বপ্নের বাসর চলচ্চিত্রে রিয়াজ ও শাবনূরের পাশাপাশি শাকিব খানের অভিনয়ও বেশ প্রশংসিত হয়। এছাড়া ‘স্ত্রীর মর্যাদা’ ছবিতে শাকিব খান প্রথম মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয় করেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

 

২০০৩ সালে শাকিব খান অভিনীত মহম্মদ হান্নান পরিচালিত সাহসী মানুষ ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় এবং দুটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

 

২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত এমএ রহিম পরিচালিত ‘সিটি টেরর’ ছবিতে তিনি অভিনেতা মান্নার সঙ্গে অভিনয় করেন। এছাড়া শাহীন-সুমন পরিচালিত বাধা চলচ্চিত্রে রিয়াজ ও পূর্ণিমার সঙ্গে অভিনয় করেন।

 

২০০৬ সালে শাকিব অভিনীত ১৩টি ছবিই উক্ত বছরের সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছিল। এই সাফল্যের ফলে তার পারিশ্রমিক রাতারাতি ৩ লাখ থেকে ৬/৭ লাখ টাকা হয়ে যায়। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প সুভা অবলম্বনে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত সুভা চলচ্চিত্রে পূর্ণিমার বিপরীতে অভিনয় করেন। এ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০০৭ সালে প্রদত্ত লাক্স-চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে দর্শক জরিপ ও সমালোচক উভয় শাখায় মনোনীত হন। একই বছর মুক্তি পাওয়া কোটি টাকার কাবিন ছবিতে তিনি প্রথমবারের মত অপু বিশ্বাসের সঙ্গে অভিনয় করেন এবং চাচ্চু ছবিটি দিয়ে তার প্রথম দর্শকপ্রিয়তা পান।

 

২০০৮ সালে শাকিব খান অভিনীত বদিউল আলম খোকন পরিচালিত প্রিয়া আমার প্রিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং লাক্স-চ্যানেল আই পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন এবং এটি বক্স অফিসেও সাফল্য পায়। একই বছরে পিএ কাজল পরিচালিত ১ টাকার বউ চলচ্চিত্রে তিনি চিত্রনায়িকা শাবনূর ও রুমানা খান এর সঙ্গে অভিনয় করেন। উক্ত ছবিটি একটি বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও একটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে, এবং এফ আই মানিক পরিচালিত যদি বউ সাজো গো চলচ্চিত্রে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

 

২০০৯ সালে সবার উপরে তুমি ছবিটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান। এতে তার বিপরীতে প্রথমবারের মতো ভারতীয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে দেখা যায়। চলচ্চিত্রটি পরের আমার ভাই আমার বোন নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায়। একই বছর পিএ কাজল পরিচালিত স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয় এবং তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত আমার প্রাণের প্রিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ২০১০ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। এই চলচ্চিত্রের “কি জাদু করেছো বলোনা” গানটি এক বছর হিট গানের তালিকায় ছিল।

 

২০১০ সালে তার অভিনীত মুক্তি পাওয়া জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না ছবিটির জন্য ২০১১ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত হন, এবং ২০১২ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রথমবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১০ সালে বদিউল আলম খোকন পরিচালিত নাম্বার ওয়ান শাকিব খান চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক সফলতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাছাড়া শাহাদাত হোসেন লিটনের জীবন মরণের সাথী, পিএ কাজলের চাচ্চু আমার চাচ্চু, এবং বদিউল আলম খোকনের নিঃশ্বাস আমার তুমি এই চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

 

২০১১ সালে শাকিব খান অভিনীত সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কোটি টাকার প্রেম ও পরিচালক জুটি শাহীন-সুমন পরিচালিত টাইগার নাম্বার ওয়ান ব্যবসাসফল হয়। মালেক আফসারী পরিচালিত মনের জ্বালা চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস, চলচ্চিত্রটিতে প্রথমবারের মতো তিনি নেপথ্য শিল্পী হিসেবে আমি চোখ তুলে তাকালেই সূর্য লুকায় গানে কণ্ঠ দেন। মোহাম্মদ হোসেন জেমী পরিচালিত কিং খান চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করে অপু বিশ্বাস ও লামিয়া মিমো এবং এটি বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হয়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ২০১২ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালিত আদরের জামাই চলচ্চিত্রটির জন্য মনোনীত হন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত বস নাম্বার ওয়ান ও শাহ আলম কিরণ পরিচালিত মাটির ঠিকানা বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও এবছর শাহীন-সুমন পরিচালিত কে আপন কে পর চলচ্চিত্রে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

২০১২ সালে বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ডন নাম্বার ওয়ান চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৩ সালে দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। পরিচালক জুটি শাহীন-সুমন পরিচালিত খোদার পরে মা চলচ্চিত্রে মুন্না চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তার দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

 

২০১৩ সালে তার অভিনীত এফ আই মানিক পরিচালিত জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন পূর্ণিমা। এছাড়াও এই চলচ্চিত্রতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর একসাথে অভিনয় করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় তিন তারকা রাজ্জাক, সোহেল রানা ও আলমগীর। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসেও সফলতা অর্জন করে।

 

কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বিখ্যাত উপন্যাস দেবদাস অবলম্বনে নির্মিত দেবদাস চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এই ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস এবং চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী। এরপর সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী চলচ্চিত্রে শাকিব খান অভিনয় করেন। এ চলচ্চিত্রে তিনি দ্বিতীয়বার নেপথ্য শিল্পী হিসাবে ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই গানে কণ্ঠ দেন। চলচ্চিত্রটিতে তিনি জয় শিকদার চরিত্রে অভিনয় করে ২০১৪ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।

 

২০১৪ সালে নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা এসকে ফিল্মস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে হিরো: দ্যা সুপারস্টার ছায়াছবিটি প্রযোজনা করেন। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ১২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়, যা সেই সময় রেকর্ড সংখ্যক ছিল এবং এটি বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। পরবর্তীতে অবশ্য তারই অভিনীত হিটম্যান চলচ্চিত্রটি এই রেকর্ডটি ভেঙে ফেলে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি ২০১৫ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন।

 

২০১৫ সালে অভিনয় করেন সোহেল আরমান পরিচালিত ‘এইতো প্রেম’ যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০১৬ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হন। এরপর এস এ হক অলিক পরিচালিত আরো ভালোবাসবো তোমায় চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন নবাগতা পরীমনি। এই চলচ্চিত্রে শাকিব খান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত লাভ ম্যারেজ বক্স অফিসে ব্যবসাসফল হয় এবং বদিউল আলম খোকন পরিচালিত প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র রাজাবাবু – দ্য পাওয়ার ছবিতে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি সর্বাধিক ১৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, যা সেই সময় যেকোনো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের জন্য রেকর্ড সংখ্যক ছিল।

 

তার অভিনীত ২০১৬ সালের এপ্রিলে মুক্তি পায় সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২, যা ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর অনুবর্তী পর্ব। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়, এবং বক্স অফিসেও ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়, যা বক্স অফিসে সুপার হিট হিসাবে ঘোষিত হয়। এটি ২০১৬ সালের সর্বাধিক উপার্জনকারী বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম হয়। একই বছর যৌথ প্রযোজনার শিকারি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের জাকির হোসেন সীমান্ত ও ভারতের জয়দীপ মুখার্জী। চলচ্চিত্রে টালিউড অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের সাথে প্রথম জুটি বেঁধে সমাদৃত হন। চলচ্চিত্রে তার নতুন অবয়ব দর্শক ও সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসা কুড়ায়। এটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার তকমা পায় এবং ২০১৬ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলা চলচ্চিত্রের তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করে নেয়। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে শাকিব খান শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও টেলি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও চলচ্চিত্রটি কালাকার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে একটি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে। তারপর শাকিব খান অভিনীত মারপিটধর্মী চলচ্চিত্র বসগিরি। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নবাগতা শবনম বুবলি। চলচ্চিত্রটি ১৯তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে ৩টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।

 

২০১৭ সালের শুরুতে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র সত্তা। কথাসাহিত্যিক সোহানী হোসেনের মা গল্প অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন হাসিবুর রেজা কল্লোল এবং এতে প্রথমবারের তার বিপরীতে অভিনয় করেন ভারতের পাওলি দাম। এই চলচ্চিত্রে শাকিব খানের অভিনয় সব শ্রেনীর দর্শকের মন কাড়ে, বক্স অফিসেও চলচ্চিত্রটি সন্তোষজনক ব্যবসা করে এবং ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ৫টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটিতে শাকিব খান বড় লোকের বখে যাওয়া নেশাগ্রস্থ তরুণের চরিত্র সবুজ ভূমিকায় অভিনয় করে চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার নবাব পরিচালনা করেন জয়দীপ মুখার্জী এবং এতে প্রথমবারের মত তার বিপরীতে অভিনয় করেন ভারতের শুভশ্রী গাঙ্গুলী। চলচ্চিত্র ১২৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং এটি ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের তালিকায় ও সর্বকালের সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং পশ্চিমবঙ্গের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান করে নেয়। চলচ্চিত্রে তার শক্তিশালী অভিনয় ও নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ সমালোচক ও দর্শক দ্বারা উভয় মহলে প্রশংসিত হয়। একই বছরে শাকিব খান অভিনীত রাজনীতি চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন বুলবুল বিশ্বাস। চলচ্চিত্রটি দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে।

বীর মুভি শাকিব খান
বীর মুভি শাকিব খান

২০১৯ সালে শাকিব খান অভিনীত পাসওয়ার্ড ও নোলক শিরোনামের দুইটি চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। পাসওয়ার্ড চলচ্চিত্রটি বছরের সর্বাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। নকল, গানের সুর চুরি, অন্য ছবির প্রচারণায় সময় না দেয়ার অভিযোগসহ নানা সমালোচনা সত্বেও এটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়, ২০১৯ সালের দেশের সর্বাধিক আয়ের চলচ্চিত্র তালিকায় স্থান করে নেয় এবং সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে আয়োজিত ১ম ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পুরস্কারে সর্বাধিক ৫টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে এবং সেরা জনপ্রিয় অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। প্রণয়ধর্মী নোলক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন সাকিব সনেট এবং তার দল। এতে তিনি ইয়ামিন হক ববির বিপরীতে শাওন তালুকদার ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পুরস্কারে একটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে এবং বেশ কয়েকটি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *