পরবাসে নিভৃতে সজল কুমার মিত্র

পরবাসে নিভৃতে সজল কুমার মিত্র

শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :

সজল কুমার মিত্র। দেশের মিডিয়া পাড়ায় যিনি পরিচিত সজল মিত্র রিচার্ড নামে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক, গীতিকার, লেখক, সাংবাদিক, ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার হিসেবে যার নামটি বর্তমান সময়ে অনায়াসেই চলে আসে প্রথম সারিতে। কেমন আছেন তিনি? কোথায় আছেন কিংবা কি করছেন? সবকিছু থেকে নিজেকে আড়াল করেছেন কেনো? সেই বিষয়ে জানা যাক বিস্তারিত।

দেখছেন সময় সংবাদ, সঙ্গে রয়েছি আমি সজল মিত্র রিচার্ড। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেল সময় টেলিভিশন খুললে যে মুখটি ভেসে উঠতো পর্দায় তার কথাই বলছি। পুরো নাম সজল কুমার মিত্র। জাতীয় খবর, রাজনৈতিক পট পর্যালোচনা, আন্তর্জাতিক পট বিশ্লেষণ কিংবা খেলার খবর, সবকিছুতেই অসামান্য দক্ষতায় টেলিভিশন পর্দায় উপস্থাপন করতেন এই মানুষটি। তার সংবাদ উপস্থাপনার ভক্ত দেশের কোথায় নেই? আধুনিক যুগে এতো এতো টেলিভিশনের ভীড়ে সংবাদ উপস্থাপনাকে যে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটি তার উপস্থাপনায় প্রমাণিত হয়েছে। অনেক দিন ধরেই সবকিছুর অন্তরালে আছেন এই মানুষটি। ইন্টারনেট কলে অনেক চেষ্টার পর তাকে পাওয়া গেলো। তার পরই শুরু হলো আলাপচারিতা।
জানালেন ভালো আছেন তিনি। আপাতত দেশের বাইরে আছেন। আগের জনপ্রিয়তাকে মিস করলেও অভিমানী সুরে বললেন এই জায়গাতে ফেরার ইচ্ছে নেই তার। কিন্তু, কেন? সেই জবাবে তিনি বলেন, অনেক কিছু বলতে চাইলেও বলা যায় না কিংবা বলা হয় না। অক্ষেপের সুর ঝড়লো তার কণ্ঠে।

তার লেখা গানের ভক্তও দেশে অনেক। ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের শুরুতে যখন রেডিও জকি হিসেবে দেশের প্রথম প্রাইভেট রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে (এফএম ৮৯.৬) চাকুরী শুরু করেছিলেন তখন থেকেই নিজেকে গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় ছিলেন। রেডিও টুডের ম্যানেজমেন্ট আরজে হিসেবে তার নাম দিয়েছিলো রিচার্ড। তখনকার প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয় আরজে এসকে রিচার্ড মিডিয়াতে এই রিচার্ড নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন পরে। যা তার ডাকনাম হয়ে ওঠে সবার কাছে। গীতিকার হিসেবে সফলও হন তিনি। অর্জন করেন নানা পুরস্কার। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে গানও গেয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে গানের চর্চা থাকায় এ অঙ্গনেও বেশ সুনাম রয়েছে তার। করেছেন মিউজিক ভিডিও। বাংলাদেশের চিরসবুজ হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহ’র একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ায় তার অভিনীত মুভির গান কাভার করে পেয়েছেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।

স্কুল-কলেজ জীবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও নিজেকে যুক্তিবাদী চিন্তার সঙ্গে যুক্ত রাখতে করেছেন বিতর্ক চর্চা। একাধিকবার টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগীতায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য এবং নিজে হয়েছেন শ্রেষ্ঠ বক্তা।

এরপর ২০১৩ সালে শুরু হয় সজল কুমার মিত্রের নতুন স্বপ্নযাত্রা। দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল সময় টেলিভিশনে যোগ দেন সংবাদকর্মী হিসেবে। সংবাদ উপস্থাপনায় ভিন্নমাত্রা যোগ করে তিনি দীর্ঘ ১২ বছরে হয়ে ওঠেন অনন্য। যা টেলিভিশন পর্দায় দেশের সঙ্গে দেখেছে দেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাঙ্গালীরাও। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, বিশ্বপটে চলমান কুটনৈতিক তৎপরতা, ক্রীড়া জগতের উল্লেখযোগ্য ঘটনায় তার বিশ্লেষনাত্মক উপস্থাপনা প্রশংসিত হয়েছে সবসময়।

২০১৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ঢাকা এফএম ৯০.৪ তার দেয়া ধারাভাষ্য তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় দেশবাসীর কাছে। সেবছর সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপের কির্তিগাঁথা অনন্য বিবরণে ফুঁটিয়ে তোলেন তিনি।

নানাভাবে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা এই মানুষটি পেশাগতভাবে একজন মার্কেটিং এন্ড কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট। শিক্ষা জীবনে দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ স্তরের ডিগ্রীধারী সজল কুমার মিত্র স্কুল, কলেজের পাঠ চুঁকিয়ে গ্রাজুয়েশন এবং তারপর মাস্টার্স অব বিজনেস স্টাডিজ ডিগ্রী অর্জন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আর এরপরপরই যোগ দেন দেশের অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুনামধন্য বিশাল বিজনেস প্রতিষ্ঠান পারটেক্স স্টার গ্রুপে। সেখানে ড্যানিশ ফুডস লিমিটেডের ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে কমিউনিকেশন বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর এরপর যোগ দিয়েছিলেন দেশের আরেক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপে। যেটি কিনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গার্মেন্টস পণ্য এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত। সেই গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন টুয়েলভ ক্লদিংয়ে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন টিমের নেতুত্ব দিয়েছেন তিনি।

সামাজিকভাবেও বিভিন্ন সংগঠনের সংযুক্ত এই মানুষটি। সোস্যাল ওয়ার্কে সঙ্গে যুক্ত প্রথম আলো বন্ধুসভা, রক্তদানকারী সংগঠন ব্ল্যাডম্যান, সংবাদ উপস্থাপকদের সংগঠন নিউজ ব্রডকাস্টার অ্যালায়েন্স (এনবিএ), ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) বিভিন্ন সময়ে এসব সংগঠনের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করেছেন এই মানুষটি। তার আরও একটি বড় পরিচয় হলো আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি’র) সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন অত্যন্ত মেধাবী সজল কুমার মিত্র।

তবে পরিশেষে সবকিছু থেকে নিজেকে আপাতত গুঁটিয়ে নিয়েছেন। অধিকাংশ সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় না। নিভৃতে থাকতেই পছন্দ করেন। আবেগের সঙ্গে আক্ষেপও আছে। তার ছল ছল চোখ অনেক কিছু বোঝালেও বলতে চান না কোন আক্ষেপের কথা। তার প্রত্যাশা একটাই, পৃথিবীর সকল প্রানী ভালো থাকুক। ব্যাক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক সজল কুমার মিত্র নিজের স্ত্রী-সন্তানের জন্যও দোয়া চাইলেন, বললেন সকলের পরিবারের প্রতিটি সদস্যই যেনো নিজের ইচ্ছেশক্তি নিয়ে ভালো থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *