পনে একশ শতাংশ ছবি ফ্লপ! বলিউড কি জুলুস হারাচ্ছে?

পনে একশ শতাংশ ছবি ফ্লপ! বলিউড কি জুলুস হারাচ্ছে?

অনলাইন ডেস্ক :

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সিনেমা নির্মিত হয় ভারতে। অন্তত ৪১ ভাষার সিনেমা মুক্তি পায় বিশাল এই দেশে। তবে হাতে গোনা কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা নিয়েই চলে মাতামাতি। এর মধ্যে প্রথম নামটি হলো বলিউড। বলা চলে, বিশ্ব দরবারে ভারতীয় সিনেমাকে তুলে ধরেছে বলিউড।

হিন্দি ভাষার এই ইন্ডাস্ট্রিতে সারা বছর শত শত সিনেমা নির্মিত হয়, মুক্তি পায়। সেগুলো আবার শত-হাজার কোটি টাকা আয় করে জমজমাট রাখে মুম্বাই নগরীকে। কিন্তু করোনা মহামারির পর থেকে চিত্রটা একটু ভিন্ন। বলিউডের সিনেমা ও ব্যবসার সমীকরণ খাপ খাচ্ছে না। মুক্তিপ্রাপ্ত অধিকাংশ সিনেমাই লোকসান গুনছে।

এ কারণে প্রশ্ন উঠছে, বলিউড কি তবে ভেঙে পড়েছে? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, হয়ত ভেঙে পড়েছে। আর এর পেছনে বলিউড নিজেই দায়ী। একই সুরে কিছুদিন আগে কথা বলেছেন সুপারস্টার অক্ষয় কুমার। টানা কয়েক বছর একের পর এক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার সর্বশেষ কয়েকটি সিনেমা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

অকপটে অক্ষয় বলেছেন, ‘সিনেমা চলছে না। এটা আমাদের ভুল, আমার ভুল। আমাকে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। দর্শক কী চায়, সেটা আমাকে বুঝতে হবে। সিনেমা করার ক্ষেত্রে আমার যে চিন্তাধারা, সেটায় পরিবর্তন আনতে চাই।’

করোনাকালীন ভারতে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন প্রাইমের মতো ওটিটি মাধ্যমগুলোতে দর্শকের বড় অংশ মজে গেছে। ফলে প্রেক্ষাগৃহে এসে সিনেমা দেখার অভ্যাস অনেকের মধ্যেই হ্রাস পেয়েছে।

বলিউডে চলতি বছর এ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ২৬টি সিনেমা। এর মধ্যে ২০টিই হয়েছে ফ্লপ। শতকরা হিসাবে ৭৭ শতাংশ লোকসানের মুখে। ২০১৯ সালে সেই হার ছিল ৩৯ শতাংশ। তিন বছরের মাথায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ফ্লপের হার। যা বলিউডের জন্য অনেক বড় অশনি সংকেত।

ক্রিস্টিনা সুন্দরসন নামের মুম্বাইয়ের এক নারী জানান, তিনি আগে দুই কন্যাকে নিয়ে নিয়মিত হলে গিয়ে সিনেমা দেখতেন। কিন্তু এখন কালেভদ্রে পা রাখেন থিয়েটার প্রাঙ্গনে। তার ভাষ্য, ‘আমার মেয়েরা এখন হিন্দি সিনেমায় আগ্রহ পায় না। তারা এখন কোরিয়ান সিনেমা-সিরিজ ও বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেই ব্যস্ত থাকে।’

২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হতো বলিউডে। এরপর করোনার বড় ধাক্কা এসেছে। যা সিনে ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই বলে থাকেন, হিন্দি সিনেমা মানসম্মত হচ্ছে না বিধায় দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বিপরীত দিকে দক্ষিণ ভারতের সিনেমাগুলো দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে। যদিও দিন কয়েক আগে খ্যাতিমান নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ দাবি করেন, আসলে উল্লেখযোগ্য হারে কোনও ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাই চলছে না। হাতেগোনা দু’একটি বাদে প্রায় সব সিনেমাই ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ মানুষের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। জীবিকা নির্বাহের ভার সামলে তারা বিনোদনের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে পারছেন না।

ব্যর্থতার পেছনে চিত্রনাট্যের দুর্বলতা উঠে আসছে বারংবার। তাজা উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘লাল সিং চাড্ডা’, ‘রক্ষা বন্ধন’ কিংবা ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’-এর কথা। দারুণ প্রেক্ষাপট ও গল্প থাকলেও চিত্রনাট্যের দুর্বলতায় সাফল্যের দেখা পায়নি সিনেমাগুলো। বক্স অফিসে মন্দাবস্থার পেছনে অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে বেগবান হওয়া বয়কট মুভমেন্টের প্রভাবও রয়েছে।

মিডিয়া অ্যানালিস্টদের ধারণা, সহসাই বলিউডের এই চিত্র বদলাবে না। তবে মুক্তির অপেক্ষায় বেশ কয়েকটি আকাঙ্ক্ষিত সিনেমা রয়েছে। সেগুলো যদি দর্শকপ্রিয়তা পায়, তাহলে মন্দাবস্থা কিছুটা কাটতে পারে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *